রবিবার সকালে হঠাৎ করে পরিকল্পনা করা হলো আমরা দুই পরিবার মিলে কোথাও থেকে একদিন এর জন্য ঘুরতে গেল কেমন হয়? সেই মতো বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুটি নতুন স্হানের উদ্দেশ্যে।
সকাল ৮ টায় আমরা বোলপুর থেকে রওনা দিলাম দুটি বাইক নিয়ে। প্রথমে বোলপুর থেকে নানুর গেলাম। ওখানে সকালের টিফিন সেরে ফুটিসাকো থেকে কাটোয়া রোড ধরলাম। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল অট্টহাস সতীপীঠ। তাই নিরোল গ্রাম হয়ে পৌছে গেলাম অট্টহাস সতীপীঠ মন্দিরে। এই সময় পিকনিক এর মরসুম তাই খুব ভীড় ছিল। মন্দির টা ঘুরে নিলাম। বর্ধমান জেলার নিরোল গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ডিহি গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সতীপীঠ। এখানে দেবীর অধঃ ওষ্ঠ (অধর / নিচের ঠোঁট) পতিত হয়। এখানে দেবীকে অধরেশ্বরী নামে পূজা করা হয়।এখানে আছে এক প্রাচীন শিলামূর্তি। মন্দিরের অষ্টধাতুর মূর্তিটি চুরি হয়ে গেছে। দোলের সময় এখানে বিশাল মেলা বসে। এখানে থাকার জন্য অতিথি নিবাস আছে। মন্দির থেকে ভক্তদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাইক নিয়ে আমরা রওনা দিলাম সোনারুন্দী রাজবাড়ীর দিকে। এখান থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব প্রায় ১০ কিমি মতো। পাচুন্দি থেকে বাঁদিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে পৌছে গেলাম সোনারুন্দী রাজবাড়ী চত্বরে। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার একদম দক্ষিণ প্রান্তের একটি গ্রাম হলো সোনারুন্দি। কাটোয়া.. আজিমগঞ্জ লাইনে সালার স্টেশন এ নেমে ১০ কিমি পশ্চিমে গেলেই চোখে পড়বে সোনারুন্দি রাজবাড়ি চত্বর। প্রাচীন বঙ্গদেশে দন্ডী ছিল বণিক ও কায়স্থদের উপাধি। দন্ডী উপাধিধারী বণিকরা এই এলাকায় বসবাস করত ও এক একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিল। তামা, লোহা, ও সোনার বণিকরা নিজ উপাধি অনুসারে তিনটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিল।স্বর্নবনিকরা এইভাবে সোনারুন্দি গ্রাম এর প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে মনে করা হয়।এই এলাকায় তাঁতীদের বাস এ বেশি এবং তাঁত বস্ত্রজাত কাপড়ের সুনাম ও খুব প্রাচীন। চৈতন্য পরবর্তী যুগে এই গ্রাম এর তাঁতীরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়। নিত্যানন্দ দেব বাহাদুর সোনারুন্দি গ্রাম এর পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৫৪ বিঘা জমির উপর তার রাজবাড়ি ও মন্দির তৈরী করেন ।সেই সময় সোনারুন্দি , উদ্ধারণপুর,ও আশপাশ এর গ্রাম নিয়ে তার জমিদারি এলাকা ছিল প্রায় ৪০০০ বিঘা। সোনারুন্দি এলাকায় উচু প্রাচীর দিয়ে ঘিরে চারদিকে চারটে বিশাল তোরণ নির্মাণ করলেন।মূল রাজবাড়ির সংলগ্ন পশ্চিম অংশে কিশোরী বনওয়ারীলাল এর মন্দির নির্মাণ করলেন।প্রতিষ্ঠা করলেন রাধাকৃষ্ণ ও অষ্টসখীর মূর্তি।বৃন্দাবন এর অনুসরণ এ তিনি যুগল মূর্তির নাম দেন কিশোরী বনওয়ারীলাল।চারিদিকে বিশাল প্রাঙ্গণ।মাঝখানে নাট মন্দির।। মূল প্রাসাদ এ ১০০ র বেশি ঘর ছিল।বায়ু কোণে দাস দাসদাসি দের থাকার জন্য বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন।মন্দির এর পাশেই কিশোরী সায়র পুকুর কেটে তার ঘাট এ স্নানাগার ও গোপেশ্বর শিব এর মন্দির নির্মাণ করলেন। রাজবাড়ির বাইরে ১২ টি কুঞ্জ নির্মাণ করলেন যেখানে রাস বা ঝুলন উৎসব এর সময় কিশোরী বনওয়ারীলালজি যেতে পারেন। উৎসবের সময় এই দেব মূর্তিগুলোকে নিয়ে যাওয়া হতো কুঞ্জ গুলিতে।প্রত্যেক কুঞ্জ তে একটি করে পুকুর ও সংলগ্ন মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।মূলত তিনি বঙ্গদেশে দ্বিতীয় বৃন্ধাবন নির্মাণ করেছিলেন।সুসজ্জিত এই চত্বর কে সকলে বনওয়ারীবাদ বলতো। বর্তমান এ রাজবাড়িটি ভগ্নপ্রায় ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। রাজবাড়ির পাশে বাইরে দেখতে পেলাম দুটি ভগ্ন কামান,অযত্নে পড়ে আছে, বাচ্চারা ওটার উপর চেপে খেলা করছে। ঠাকুর মন্দির সংলগ্ন একটি বড়ো দীঘি আছে। দীঘি তে খুব বড় বড় মাছ আছে। কাউকে মাছ ধরতে দেয়া হয়না। লোকমুখে শোনা যায় রাজকুমারদের আমলে মাছকে সিঁদুর ও নথ পড়িয়ে দীঘিতে ছাড়া হত। জনশ্রুতি আছে কেউ একজন জোর করে মাছ ধরে ছিল এই দীঘি থেকে।সেদিনই সে মুখে রক্ত উঠে মারা যায়। পর্যটকরা খাবার দিলে মাছগুলি এসে পর্যটকদের হাত থেকে বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খাবার খেয়ে যায়। রাজবাড়ির বেশ কিছুটা অংশ স্কুল ও কিছুটা অংশ অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রম কে দেওয়া হয়েছে।রাজবাড়ির বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়ছে। এখনও যদি সংস্কার করা না হয় তাহলে খুব অল্পদিন এর মধ্যেই হয়ত এই ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের এই ধরনের রাজবাড়ী গুলি যদি সরকারের পর্যটন দফতর নিয়ে সংস্কার করে এবং পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় (যেমন ইটাচূনা রাজবাড়ীর মতো করা হয়, যদিও ইটাচূনা রাজবাড়ীর সরকারের পর্যটন দফতর এর নয়) তাহলে এই পূরাতন রাজবাড়ী গুলি রক্ষা হবে এবং পর্যটকদের জন্য এলাকার মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে। যদিও এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত। আসলে রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ থেকে মনে হলো যদি এই পূরাতন রাজবাড়ী গুলি কোনোভাবে রক্ষা করা যায়। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। ফেরার সময় আমরা ফুটিসাকো - কির্নাহার - লাভপুর হয়ে বোলপুর ফিরলাম (কীর্নাহার এর বিখ্যাত মন্ডা কিনলাম ফেরার সময়) (কিছু লেখার উ়ৎস:- ইন্টারনেট)
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |